ধন্য বাংলাদেশ! ধন্য মাশরাফি

শেষ ভাল যার সব ভাল তার। এক সফরে তিন ফরমেটেই জয় নিয়ে দেশে ফিরছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। যে টি-২০ ফরমেটে দুর্বলতা ছিল তাও অধিনায়কের বিদায়ী ম্যাচে তাও তুচ্ছ করে ছাড়লো বাঘ বাহিনী। টেস্ট ও ওয়ানডের মতো টি-টোয়েন্টি সিরিজও শেষ হলো ড্রতে। তিন ফরমেটেই কোন দ্বিপাক্ষিক সিরিজ সমতায় শেষ হওয়ার প্রথম নজির গড়লো বাংলাদেশ। কৃতিত্বটা বাংলাদেশেরই বেশি। কারণ খেলাটা হয়েছে শ্রীলঙ্কার মাটিতে। আর আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ে তারাই বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এ এক মাইলফলক সিরিজ বলতেই হবে। যে শ্রীলঙ্কার মাটিতে পৃথিবীর সব বাঘা দলই হিমশিম খায় সেখানে এ নৈপুণ্য বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই অগ্রগতির স্মাারক। নিন্দুকেরা খানিকটা হলেও খামোশ হবে। বৃহস্পতিবার কলম্বোর রাণগিরি প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে রাতের বয়স যত বাড়তে থাকে গোটা বাংলাদেশ ততই জেগে ওঠে। বাংলাদেশের গণমানুষের অধিনায়কে পরিণত হওয়া মাশরাফি বিন মুর্তজার বিদায়ী ম্যাচ। সতীর্থ খেলোয়াড়দের মতো আলাদা আবেগ নিয়েই টেলিভিশনের সামনে ছিল এ দেশের খেলাপ্রেমীরা। প্রথমবারের মতো জাতীয় ক্রীড়া দিবস পালনের কারণে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন এদিন জেগে ছিল সেই কাকডাকা ভোর থেকে। নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে দিনভর। আর শ্রীলঙ্কার জন্য আলাদা গুরুত্বের। ঠিক তিন বছর আগে এই দিনে (৬ই এপ্রিল) বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত টি-২০ বিশ্বকাপ শিরোপা জিতেছিল তারা। কিন্তু এই স্মরণীয় দিনে আরেক হারের স্মৃতি বয়ে বেড়াতে হবে তাদের কে জানতো। সতীর্থদের কাছ থেকে এমন ভালোবাসা আর উজাড় করে দেয়া নৈপুণ্য কজন অধিনায়কের ভাগ্যেই বা জোটে। ধন্য মাশরাফি! ধন্য! মঙ্গলবার সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ৬ উইকেটে জয় পেয়েছিল শ্রীলঙ্কা।
খেলার শুরু থেকেই এদিন সব কিছু নিজেদের অনুকুলে নিয়ে নেয় বাংলাদেশ। ব্যাটে-বলে এমনকি ফিল্ডিংয়ে তারা যোগ্য দল হিসেবেই জয় পেয়েছে। একবারের জন্য লঙ্কানরা জয়ের স্বপ্ন দেখার সুযোগ পায়নি এ খেলায়। বাংলাদেশকে ১৭৬ রানে বেধে ফেলার পর লঙ্কানরা নির্ভারই ছিল, ছিল আত্মবিশ্বাসীও। কিন্তু প্রথম ওভারেই উইকেট নিয়ে বুঝিয়ে দেন দিনটা আজ আমাদেরই। আগের দিন ভারতে শুরু হওয়া আইপিএল যাদের জন্য মুখিয়ে সেই দুই তারকা সাকিব আল হাসান ও মোস্তাফিজুর রহমানই জয়ের নায়ক। কঠিন মুহুর্তে সাকিবের ৩৮ রান আর পরে ২৪ রানে তিন উইকেট জয়ের ভিত গড়ে দেয়। মোস্তাফিজ ২১ রানে ৪ উইকেট নিয়ে শ্রীলঙ্কার সব সম্ভাবনা উড়িয়ে দেন। বাংলাদেশের ১৭৬ রানের জবাবে ১৮ ওভারে ১৩১ রানে অলআউট শ্রীলঙ্কা।
১৭৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টির শুরুটা ভাল হয়নি স্বাগতিকদের। প্রথম ওভারেই বল করেন সাকিব আল হাসান। আর সাফল্যও পান বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডার। আগের ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় কুশল পেরেরাকে বোল্ড করেন তিনি। অথচ প্রথম বলেই চার মেরেছিলেন কুশল। এরপরের ওভারে তিনি ফেরান আরেক ওপেনার মুনাবিরাকে। তিনিও করেন চার রান। চার ওভার শেষে শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ ৩৪/২। এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট খোয়াতে তারা। এক পাশে কাপুগেদারা আকড়ে থাকলেও ১০০ রানের আগেই ৬ উইকেটের পতন বলে দিচ্ছিল ম্যাচের ভাগ্য কোন দিকে যাবে। কাপু শেষ পর্যন্ত ৫০ রান করলেও তা বৃথাই যায়। বাংলাদেমের কেউই এ দিন ৪০ রানও করতে পারেনি। সাকিব সর্বোচ্চ ৩৮, ইমরুল ৩৬ আর সৌম্য সরকার করেন ৩৪ রান।
শেষ দিকে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় বাংলাদেশের সংগ্রহ প্রত্যাশা মতো হয়নি। মালিঙ্গাই শেষ কারিশমা দেখান। প্রথম ৩ ওভারে কোন উইকেট না পাওয়া লাসিথ মালিঙ্গা হ্যাটট্রিক করেই শেষ করলেন। মুশফিক, মাশরাফি আর মেহেদী হাসান মিরাজকে আউট করে আন্তর্জাতিক টি-২০ ক্যারিয়ারে প্রথম হ্যাটট্রিক করেন তিনি। মুশফিক ৫ বলে ১৫ রান করে ভালই দেখাচ্ছিলেন। কিন্তু মালিঙ্গার বলে বোল্ড। পরের বলে মাশরাফি বোল্ড। এরপরের বলে লেগবিফোর উইকেট মিরাজ। বাংলাদেশ ১৫২ রান করেছিল ১৭ ওভারে। মোসাদ্দেক ১৮তম ওভারের প্রথম বলে বোল্ড হন ১১ বলে ১৭ রান করে থিসারা পেরেরার বলে। সাকিব ৩১ বলে ৩৮ রান করে আউট হন কুলাসেকারার বলে।
১৫ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ১৩৬/৩। ৭৮ রানে দুই উইকেট হারানোর পরে তৃতীয় উইকেটে সাকিব-সাব্বির ৪৬ রানের জুটি গড়েন। সাব্বির ১৮ বলে ১৯ রান করে বোল্ড হন সনজয়ার বলে। মুশফিককে টপকে পাঁচ নম্বরে নামানো হয় মোসাদ্দেক হোসেনকে।
এর আগে ব্যাট হাতে উড়ন্ত শুরুর পর অল্প ব্যবধানে উইকেট খোয়ান সৌম্য সরকার ও ইমরুল কায়েস। লঙ্কান মিডিয়াম পেসার আসেলা গুনারতেœর হাতে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরার আগে সৌম্য করেন ১৭ বলে ৩৪ রান। এতে সৌম্য হাঁকান চারটি বাউন্ডারি ও দুটি ছক্কা। এতে ৬.৩ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৭১/১-এ। যে কোন দলের বিপক্ষেই টি-২০তে বাংলাদেশের এটি রেকর্ড ওপেনিং জুটি। এরপর ৭.৫তম ওভারে দলীয় ৭৮ রানে রানআউটে কাটা পড়ে ইমরুল কায়েসের উইকেট। ২৫ বলে ৩৬ রান করেন ইমরুল কায়েস। এতে ইমরুল হাঁকান ৪টি বাউন্ডারি ও একটি ছক্কা। কলম্বোয় সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে টস জিতে ব্যাটিং বেছে নেন বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। পিঠের ব্যথার কারণে খেলেন নি ওপেনার তামিম ইকবাল। তামিমের বদলে একাদশে জায়গা পান ইমরুল কায়েস।
এদিন টি-টোয়েন্টি অভিষেক হচ্ছে মেহেদী হাসান মিরাজের। পেসার তাসকিন আহমেদের জায়গায় একাদশে সুযোগ নিয়েছেন এ অফস্পিন অলরাউন্ডার।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর